সুশৃঙ্খল-নিরাপদ সিলেট গড়তে এনসিপি’র ২৭ প্রস্তাবনা

কওমি কণ্ঠ রিপোর্টার :

সিলেটের সড়কগুলোতে শৃঙ্খলা ফেরাতে ২৭ দফা প্রস্তুাব ও সুপারি তুলে ধরেছে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি)। দলটির সিলেট মহানগর শাখার উদ্যোগে শনিবার (৪ অক্টোবর) বিকালে আম্বরখানাস্থ একটি অভিজাত হোটেলের কনফারেন্স হলে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন এনসিপি’র কেন্দ্রীয় যুগ্ম-সমন্বয়ক ও সাংগঠনিক সম্পাদক (সিলেট বিভাগ) এহতেশাম হক।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন- সিলেটে যানজট নিরসন ও নিরাপদ সড়ক নিশ্চিতকরণ এবং দীর্ঘমেয়াদী ও টেকসই নীতি প্রণয়নের লক্ষ্যে আমাদের ২৭টি  প্রস্তাব বা সুপারিশ রয়ছে। সেগুলো হলো-


১. অংশগ্রহণমূলক নীতি প্রণয়ন :
সরকার যেন "বৈদ্যুতিক থ্রি হুইলার ব্যবস্থাপনা নীতিমালা ২০২৫" প্রজ্ঞাপন জারির পূর্বে সকল stakeholder & নাগরিকের পূর্ণাঙ্গ মতামত গ্রহণ করে। জেলা প্রশাসন ও সিলেট সিটি কর্পোরেশনের উচিত সিলেটবাসীর মতামত ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।

২. সঠিক তথ্য প্রকাশ ও গবেষণা :
কর্তৃপক্ষের উচিত অটো রিকশা-জনিত সমস্যাগুলো সিলেটবাসীর সামনে উপস্থাপন করা যেমন- সড়ক দুর্ঘটনায় অটো রিকশার ভূমিকা কতটুকু? সিএনজি ও অন্যান্য যানবাহনের ভূমিকা কতটুকু? আমরা আহ্বান জানাই— দ্রুত গবেষণা পরিচালনা করে যানজট নিরসন ও নিরাপদ সড়ক নিশ্চিতকরণে বাস্তব তথ্য প্রকাশ করা হোক। এই গবেষণায় তরুণ, বৃদ্ধ, নারী-পুরুষ সকল শ্রেণির মতামত অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

৩. যাত্রী ও পণ্য পরিবহন কমিটি গঠন :
২০২২ সালে ফ্যাসিবাদ আমলে গঠিত যাত্রী ও পরিবহন পণ্য কমিটি বিলুপ্ত করে অনতিবিলম্বে একটি যাত্রী ও পণ্য পরিবহন কমিটি গঠন করতে হবে। প্রস্তাবিত জাতীয় নীতিমালা অনুযায়ী এই কমিটি যানবাহনের চাহিদা-যোগান ও রুট নির্ধারণে দায়িত্বপ্রাপ্ত থাকবে।

৪. যান্ত্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ :
ব্যাটারি চালিত অটোরিকশার মোটর, কন্ট্রোলার, গিয়ার বক্স, ব্রেক, ব্যাটারি ও চার্জার—এসব যেন BSTI অনুমোদিত হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।

৫. ড্রাইভিং লাইসেন্স বাধ্যতামূলক করা :
অটো রিকশা চালকদের জন্য কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ইস্যুকৃত ড্রাইভিং লাইসেন্স বাধ্যতামূলক করতে হবে, এবং তা চালকদের সঙ্গে সবসময় থাকতে হবে।

৬. চালকদের প্রশিক্ষণ :
অটো রিকশা চালকদের জন্য বাধ্যতামূলক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু করতে হবে।

৭. ভাড়ার তালিকা প্রদর্শন :
যাত্রী ও পরিবহন কমিটি গঠন সাপেক্ষে, প্রতিটি আটা রিকশার দৃশ্যমান স্থানে তাড়ার চার্চ সার্বক্ষণিকভাবে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করতে হবে।

৮. গ্যারেজ তালিকা ও নিরাপত্তা :
সিলেটে বিদ্যামান আটো রিকশার গ্যারেজগুলোর তালিকা প্রকাশ করতে হবে এবং নিয়মিত ইনস্পেকশন চালাতে হবে যেন- অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকে,
শর্ট সার্কিট বা দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমে, গ্যারেজ ও আশপাশের এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়।

৯. নির্দিষ্ট পার্কিং স্ট্যান্ড :
অটোরিকশা ও অন্যান্য যানবাহনের জন্য নির্দিষ্ট পার্কিং স্ট্যান্ড নির্ধারণ করতে হবে।

১০. চার্জিং স্টেশন ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি :
বিদ্যুৎ বিভাগের "বৈদ্যুতিক যান নির্দেশিকা ২০২২” অনুসারে সিলেটের চার্জিং স্টেশনগুলো চিহ্নিত করতে হবে। একইসাথে সোলার প্যানেল বা নবায়নযোগ্য জ্বালানির মাধ্যমে চার্জিং ব্যবস্থায় ব্যবসায়ী ও চালকদের উৎসাহিত করতে হবে।

১১. ফি নির্ধারণে আলোচনা :
আটো রিকশার নিবন্ধন, ফিটনেস, ট্যাক্স টোকেন ও লাইসেন্স ফি—এসব নির্ধারণে মালিক সমিতি ও সংশ্লিষ্ট পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে।

১২. রেকার চি বৈষম্য দূরীকরণ :
বর্তমানে খুলনায় ৮০০ টাকা, ঢাকায় ১২০০ টাকা, কিন্তু সিলেটে অন্যায়ভাবে ৩০০০ টাকা রেকার ফি নেওয়া হচ্ছে। এই বৈষম্য অবিলম্বে দূর করতে হবে।

১৩. পরিবেশবান্ধব ডিসপোজাল ও চার্জিং নীতি :
মেয়াদোত্তীর্ণ ব্যাটারি ও যন্ত্রাংশ পরিবেশবান্ধব উপায়ে ডিসপোজাল করতে হবে এবং চার্জিং ব্যবস্থা বৈদ্যুতিক যান চার্জিং নির্দেশিকা ২০২২ অনুসারে পরিচালিত করতে হবে।

১৪. সড়ক প্রশস্তকরণ :
সিলেটের সংযোগ সড়কগুলোর ধারণক্ষমতা অতিক্রম করেছে। যেসব সড়ক প্রশস্ত করা সম্ভব, তৎপর উদ্যোগে প্রশস্তকরণ করতে হবে।

১৫. প্রতিষ্ঠান স্থানান্তর :
অপরিকল্পিত নগরায়ন রোধে বন্দর ও জিন্দাবাজার এলাকায় অবস্থিত বড় প্রাতিষ্ঠানিক ও প্রশাসনিক অফিসগুলো ধীরে ধীরে শহরের বাইরে স্থানান্তর করতে হবে।

১৬. উঁচু ভবন নির্মাণে সীমাবদ্ধতা :
ঘনবসতিপূর্ণ বাণিজ্যিক এলাকায় নতুন উঁচু ভবন নির্মাণে অনুমতি দেওয়া যাবে না।

১৭. হাসান মার্কেট সংস্কার ও হকার ব্যবস্থাপনা :
২০০৯ সালের গবেষণায় সুপারিশকৃত বন্দরস্থ হাসান মার্কেট সংস্কার এখনো সম্পন্ন হয়নি। অব্যবহৃত স্থাপনাগুলো সংস্কার করে পার্কিং স্পেস ও ভাসমান দোকান/হকারদের স্থায়ী ব্যবস্থা করতে হবে।

১৮. সড়ক নিরাপত্তা অবকাঠামো :
প্রয়োজনীয় সংখ্যক স্পিড ব্রেকার, জেব্রা ক্রসিং, ট্রাফিক সিগন্যাল, স্ট্রিট লাইট ও লাইটপোস্ট স্থাপন করতে হবে।

১৯. ডিজিটাল ট্রাফিক সিস্টেম :
দীর্ঘ ৩০ বছর আগে স্থাপিত ট্রাফিক ল্যাম্পগুলো এখন অকেজো অবস্থায়। ২০২৫ সালে প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেটে ডিজিটাল ট্রাফিক সিস্টেম চালু করা এখন সময়ের দাবি।
২০. টার্মিনাল স্থানান্তর যানজট কমাতে লেগুনা ও সিএনজি টার্মিনাল স্ট্যান্ডগুলো শহরের কেন্দ্র থেকে অন্যত্র সরিয়ে নিতে হবে।

২১. মাজার এলাকা ব্যবস্থাপনা :
হযরত শাহজালাল (রহ.) মাজার সংলগ্ন সড়কে বাইরের জেলার দর্শনার্থীদের বাস ও কোচ পার্কিংয়ের নির্দিষ্ট সময় ও স্থান নির্ধারণ করতে হবে।

২২. আলাদা লেন চালু :
প্যাডেল ও ব্যাটারি চালিত যানবাহনের জন্য আলাদা লেন চালু করতে হবে।

২৩. যানবাহনের সীমা নির্ধারণ :
গবেষণার মাধ্যমে সিলেট শহরের যানবাহন চাহিদা নিরূপণ করে সর্বোচ্চ ৬,০০০ অটো রিকশা পর্যন্ত পারমিট সীমা নির্ধারণ করতে হবে।

২৪. নির্দিষ্ট রোড নির্ধারণ :
প্রধান ও উপ-সড়কগুলো চিহ্নিত করে অটো রিকশার নির্দিষ্ট রোডম্যাপ নির্ধারণ করতে হবে।

২৫. অপ্রাপ্তবয়স্ক ও লাইসেন্সবিহীন চালক সনাক্তকরণ :
অপ্রাপ্তবয়স্ক ও লাইসেন্সবিহীন চালকদের বিরুদ্ধে প্রশাসনকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।

২৬. ট্রাফিক শিক্ষা ও সচেতনতা :
চালক, যাত্রী ও সাধারণ জনগণের জন্য ট্রাফিক সিগন্যাল, জেব্রা ক্রসিং ও সড়ক নিরাপত্তা শিক্ষা কার্যক্রম চালু করতে হবে।

২৭. পরিবহন শ্রমিকদের প্রতি সম্মান ও সংহতি :
২০২৪ সালের বিপ্লবে পরিবহন শ্রমিকরা নিজেদের জীবন বাজি রেখে দেশের পাশে দাঁড়িয়েছিল।

এনসিপি নেতা এহতেশাম হক আরও বলেন- আমরা মনে করি, তাদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের সংগ্রামে প্রত্যেক নাগরিকের সংহতি প্রকাশ করা কর্তব্য। মিথ্যা মামলা, হামলা বা নির্যাতন কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। যে কোনো সংকট ও অচলাবস্থা দূরীকরণে প্রশাসন, রাজনৈতিক দল ও শ্রমিক সংগঠনকে সম্মিলিতভাবে সমাধানমুখী পদক্ষেপ নিতে হবে।

আমরা বিশ্বাস করি- এই বাস্তবমুখী পদক্ষেপগুলো সিলেটের যানজট নিরসন, সড়ক নিরাপত্তা ও টেকসই নগর পরিকল্পনা বাস্তবায়নে যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে।

সংবাদ সম্মেলনে এনসিপি সিলেট মহানগর শাখার নেতাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।