বৃষ্টির বাহানায় বেড়েছে মাছ-সবজির দাম

কওমি কণ্ঠ ডেস্ক :

সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে দাম বেড়েছে প্রায় সব ধরনের সবজি ও মাছের। এর মধ্যে বেশিরভাগ সবজির দামই কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে গত সপ্তাহের তুলনায়। এই দাম বৃদ্ধির পেছনে গত কয়েকদিনের বৃষ্টিকে দায়ী করছেন বিক্রেতারা।

তারা বলছেন, বৃষ্টিতে চাষিদের ফলন নষ্ট হয়েছে, তাই দামও বাড়তি।

তবে তাদের এই ‘বাহানা’য় যে ক্রেতারা সন্তুষ্ট নয়, তা বোঝা গেল সূত্রাপুর বাজারে বাজার করতে আসা ক্রেতা সাদ্দাম হোসাইনের কথায়। গতকাল সকালে তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘দেশের ব্যবসায়ীরা কোনো একটা বাহানা পেলেই সবকিছুর দাম বাড়িয়ে দেন। যেন তারা অপেক্ষায় থাকেন নতুন কোনো ইস্যু তৈরির। আর সেই সুযোগে নিজেদের পকেট ভারী করে নেন।’ অনেকটা ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের ব্যবসায়ীরা সুযোগসন্ধানী। তারা কেয়ামতের কথা আগে জানতে পারলে মনে হয়, কাফনের কাপড়ের দামটাও বাড়িয়ে দেবেন।’

শুধু সাদ্দাম হোসাইনই নন, সকালে বাজার করতে আসা বেশিরভাগ ক্রেতার সঙ্গে কথা বলে একই সুর পাওয়া গেছে। তাদের সবার ভাষ্যই এক রকম। সবাই চান সরকারি তদারক সংস্থার সক্রিয় তদারকি কার্যক্রম। কিছু ক্রেতা অবশ্য রাগে-ক্ষোভে কোনো মন্তব্যই করতে চাননি।

বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় সব সবজির দামই বাড়তির দিকে। শুধু কাঁচা পেঁপে ও আলুর দাম মধ্যবিত্তের নাগালের মধ্যে রয়েছে। বাজারে সবচেয়ে বেশি সংকট ও দাম বাড়তি দেখা গেছে কাঁচামরিচের। এই পণ্যটির দাম সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিপ্রতি প্রায় ১০০ টাকা বেড়ে ৩২০ টাকায় উঠেছে। শুধু কাঁচা পেঁপে ২০ থেকে ২৫ টাকা এবং আলু ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া পুঁইশাকের আঁটি ৪০ টাকা ও লালশাকের আঁটি ৩০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। বাজারগুলোতে মিষ্টি কুমড়া ও ধুন্দল ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। বাকি প্রায় সব সবজির দাম ৮০ টাকার ওপরে। এর মধ্যে বেশিরভাগ সবজির দামই কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে গত সপ্তাহের তুলনায়। বাজারে বরবটি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা, করলা ১২০ টাকা, পটোল ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৮০ টাকা, কাঁকরোল ৮০ টাকা, লম্বা বেগুন ১০০ টাকা এবং গোল বেগুন বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা কেজি দরে। এ ছাড়া প্রতি কেজি গাজর ১২০ টাকা, কচুরলতি ১০০ টাকা, ঢ্যাঁড়শ ৮০ টাকা, টমেটো ১২০ থেকে ১৪০ টাকা, লাউ প্রতি পিস ছোট ৮০ টাকা এবং বড় ১২০ টাকা, জালি কুমড়া প্রতি পিস ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সবুজ হোসেন নামে এক ক্রেতা বলেন, আমাদের দেশের ব্যবসায়ীরা শুধু দাম বাড়াতেই জানেন। কিছু একটা শুনলেই তারা দাম বাড়িয়ে দেন। পবিত্র রমজান মাসে যেখানে অন্যান্য দেশের ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন ছাড় দেন, সেখানে আমাদের দেশের ব্যবসায়ীরা দাম আরও বাড়িয়ে দেন। তাহলে স্পষ্টই বোঝা যায়, আমাদের দেশের ব্যবসায়ীদের মানসিকতা কেমন।

বাজারগুলোতে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে কাঁচামরিচের দাম। প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে সর্বনিম্ন ২৮০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৩২০ টাকায়, যা গত সপ্তাহেও ছিল ২০০ থেকে ২২০ টাকার মধ্যে। সপ্তাহের ব্যবধানে এই পণ্যটির দাম বেড়েছে প্রায় ১০০ টাকা।

এক সবজি বিক্রেতা বলেন, ‘পাইকারি বাজারে কাঁচামরিচের ব্যাপক সংকট তৈরি হয়েছে। বৃষ্টিতে চাষিদের ফসল নষ্ট হয়েছে। শুনছি, ভারত থেকেও নাকি মরিচ আসা বন্ধ রয়েছে। তাই এই সংকট তৈরি হয়েছে। পাঁচ কেজি এখন কিনতে হচ্ছে ১২০০ থেকে ১৩০০ টাকায়। এক সপ্তাহ আগেও ৮০০ থেকে ৯০০ টাকায় কিনতে পারতাম।’

এদিকে, ইলিশ ধরা ৪ অক্টোবর থেকে সরকারিভাব বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ইলিশের স্বাভাবিক সরবরাহ থাকলেও বাজারে বেড়েছে ছোট-বড় সব ধরনের ইলিশের দাম। বড় ইলিশের দাম কেজিতে ৩০০ টাকা বেড়ে ২ হাজার ৩০০ থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকা এবং ৭০০ বা ৮০০ গ্রামের ইলিশ ২ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আকারে ছোট ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১ হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এ ছাড়া বাজারগুলোতে অন্যান্য মাছের মধ্যে চাষের রুইয়ের দাম বেড়ে আকারভেদে প্রতি কেজি ৪০০ থেকে ৫৫০ টাকা, কাতলা ৩৫০ থেকে ৪২০ টাকা, চাষের শিং প্রতি কেজি ৩৫০ থেকে ৫৫০ টাকায়, দেশি শিং ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা, পাঙাশ ২০০ থেকে ২৩৫ টাকা, চিংড়ি প্রতি কেজি ৮০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা, বড় কাতলা ৪০০ থেকে ৫৫০ টাকা, তেলাপিয়া ২২০ টাকা, চাষের কৈ ২২০ থেকে ২৩৫ টাকা, টেংরা ৬০০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এক ক্রেতা বলেন, ‘গত বছর এই সময়ে ইলিশের দাম কম ছিল। কিন্তু এ বছর আকারে একটু বড় ইলিশ দামের কারণে কিনে খেতে পারিনি। চাষের অন্যান্য মাছের দামও কেজিতে ৫০ থেকে ১০০ টাকার মতো বেড়েছে। এভাবে চলতে থাকলে চাষের মাছও কিনে খেতে পারব না কিছুদিন পর।’

অপরদিকে, বাজারে মাংস ও মুরগির চড়া দাম বহাল রয়েছে। প্রতি কেজি সোনালি মুরগি ৩০০ থেকে ৩৩০ টাকা, ব্রয়লার ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা, দেশি ৬০০ থেকে ৬৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গরুর মাংস প্রতি কেজি ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা, খাসি ১১০০ থেকে ১২০০ টাকা ও বকরি ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশি হাঁস ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা, রাজহাঁস ১ হাজার ৬০০ থেকে ২ হাজার টাকা এবং চায়না হাঁস ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আমাদের যেসব প্রতিষ্ঠান রয়েছে, সেগুলো ঠিকমতো কাজ করছে না। সরকার পতনের পর চাঁদাবাজি কিছুটা কমেছিল। কিন্তু সেটা আবার সক্রিয় হয়েছে। বাজার তদারক সংস্থাগুলোর তদারকি আরও বাড়ানো উচিত।


(মূল রিপোর্ট : কালবেলা)