কওমি কণ্ঠ রিপোর্টার :
আগামী সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থাকছে না- এমনটা ধরে নিয়ে রাজনীতিতে চলছে নতুন মেরূকরণের চেষ্টা। আওয়ামী লীগহীন নির্বাচনে সবাই চেষ্টা করছে কার্যক্রম নিষিদ্ধ দলটির সাধারণ ভোটারদের ভোট নিজেদের বাক্সে টানতে। ফলে বাকি দলগুলোর মধ্যে চলছে নানা হিসাব-নিকাশ। এরই ধারাবাহিকতায় বিএনপির মতো জামায়াতও চাচ্ছে ভোটের লড়াইয়ে একক থাকতে।
তবে উল্লেখযোগ্য ৫টি ইসলামি দল চাচ্ছে- তাদের অনুসারীসহ ধর্মপ্রাণ মানুষের ভোট এক বাক্সে নিয়ে আসতে। সে লক্ষ্যে কাজও করছে দলগুলো।
এর বাইরে বিএনপির বিপরীতে এক ধরনের ‘বৃহত্তর নির্বাচনী সমঝোতা’র প্রচেষ্টা চালাচ্ছে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া দলগুলো।
আপাতত নির্বাচনি অবয়বটা হলো– জামায়াতে ইসলামী বিএনপির মতো এককভাবে নির্বাচন করবে। চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন সামনে রেখে ধর্মভিত্তিক দলগুলো একটা প্ল্যাটফর্ম গঠন করবে। আর সংস্কার আলোচনায় বিএনপির বিপরীতে অবস্থান নেওয়া দলগুলো নিয়ে পৃথক মোর্চা গঠন করবে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। এই তিন শক্তি আনুষ্ঠানিক কোনো জোট গঠন করবে না। কিন্তু তারা নির্বাচনে একে অন্যকে আসনভিত্তিক ছাড় দেবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন- আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ না থাকায় ভোটের রাজনীতিতে নতুন মেরূকরণ হবে। বিএনপি মূলত আওয়ামীবিরোধী মনোভাবের ভোটারদের প্ল্যাটফর্ম। নির্বাচনে নৌকার বিরোধিতা করে বারবার ধানের শীষে ভোট দিয়েছে তারা। এবারে নির্বাচনে নৌকা না থাকায় আওয়ামীবিরোধী ভোট ধানের শীষ একা পাবে না। নানা ভাগে ভাগ হবে। তবে নির্বাচনে নৌকা প্রতীক থাকলে আওয়ামী লীগকে ঠেকাতে অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া দলগুলো বিএনপির নেতৃত্ব মেনে চলতে বাধ্য হতো। আওয়ামী লীগ ফিরলে আবার নির্যাতনের শিকার হতে হবে– এ ভয়ে দলগুলো বিএনপি যে কয়টি আসন দিত, তা মেনে নিত। আওয়ামী লীগ নির্বাচন থেকে ছিটকে যাওয়ায় এ পরিস্থিতি এখন আর নেই।
এদিকে, জামায়াতের নীতিনির্ধারণী নেতারা জানিয়েছেন- অতীত অভিজ্ঞতার কারণে আগামী নির্বাচনে জোট করবে না জামায়াত। দলটির একজন জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, ‘আদর্শিক কারণে জোট গঠন কঠিন কাজ। কওমি ঘরানার অনেক দলের রাজনৈতিক ভিত্তিই জামায়াত-বিরোধিতা। তারা চাইলেও জামায়াতের সঙ্গে জোট করবে না। আবার জামায়াতের পক্ষে বাম ঘরানার দলের সঙ্গে জোট করা সম্ভব না।
অপরদিকে, চরমোনাই পীরের দলের সঙ্গে মামুনুল হকের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, জমিয়ত, খেলাফত, ইসলামী ঐক্যজোট এবং নেজামে ইসলাম পার্টি গত এপ্রিল থেকে সমঝোতার লক্ষ্যে আলাপ-আলোচনা করছে। লিয়াজোঁ কমিটিও গঠন করেছে। কওমি মাদরাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামঘনিষ্ঠ এই দলগুলো বলছে, তারা ইসলামপন্থিদের ভোট আগামী নির্বাচনে এক বাক্সে আনতে চায়।
ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব ইউনুস আহমাদ এ বিষয়ে বলেন, জোট গঠন কঠিন কাজ। তাই সমঝোতা করা হবে। যে যার রাজনীতি করবে, কর্মসূচি পালন করবে। তবে চেষ্টা থাকবে, ইসলামী দলগুলোর যেন একক প্রার্থী থাকে প্রতিটি আসনে।
জামায়াতের সঙ্গে জোটের বিষয়ে তিনি বলেন, কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক দলগুলোতে নেতাদের চেয়ে প্রভাবশালী হলেন ‘মুরব্বিরা’। দেওবন্দি ঘরনার এই আলেমরাই দলগুলোর প্রধান শক্তি। তারা জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা আবুল আলা মওদুদীর মতবাদের বিরোধী। সুতরাং জামায়াতের সঙ্গে জোট করা কঠিন।
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব আতাউল্লাহ আমীন বলেন, ইসলামপন্থী দলগুলো ভোট এক বাক্সে আনতে একমত হয়েছে। একক ইশতেহার বা কর্মসূচি হয়তো হবে না, শুধু নির্বাচনী সমঝোতা হবে।
অন্যদিকে, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় মহাসচিব মাওলানা মনজুরুল ইসলাম আফেন্দি বলেছেন- আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে পাঁচটি ধর্মভিত্তিক দল একটি সমঝোতায় পৌঁছেছে। তবে জামায়াত ইসলামকে আমরা এখনো রাখিনি সমঝোতায়। এটা সবার সিদ্ধান্তের বিষয়।
বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) বিকেলে সিলেট যুব জমিয়তের বিভাগীয় যুব সম্মেলন শেষে সাংবাদিকদর প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
এসময় তিনি আরও বলেন, আমরা প্রথমে জাতীয় নির্বাচন চাই। নির্বাচনে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার মতো সক্ষমতা আমাদের (জমিয়ত) আছে। কিন্তু সমঝোতা হলে ভিন্ন সিদ্ধান্ত নিতে পারে দল।