আরিফ-মুক্তাদির ‘দ্বন্দ্বের দাওয়াই’ ডা. জোবাইদা!

কওমি কণ্ঠ রিপোর্টার :

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানকে আগামী সংসদ নির্বাচনে সিলেট-১ আসন থেকে প্রার্থী চেয়ে পোস্টারে  ছেয়ে গেছে সিলেট।

বিষয়টি নিয়ে একদিকে সিলেট বিএনপির নেতারা বলছেন- তারা এ ব্যাপারে কিছু জানেন না। 

অপরদিকে, নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন নেতা বলছেন- গুরুত্বপূর্ণ এই সংসদীয় আসনে আরিফ-মুক্তাদির ‘দ্বন্দ্বের দাওয়াই’ হতে পারেন ডা. জোবাইদা রহমান।

সিলেট-১ আসনে দু’বার নির্বাচন করে পরাজিত হয়েছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির। আবার এই আসনে নির্বাচন করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে মাঠে সরব সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। তারা দু’জনই আগামী নির্বাচনে সিলেট-১ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী।

এরই মাঝে ‘ডা. জোবাইদা রহমানকে সাংসদ হিসাবে দেখতে চাই’ লেখা পোস্টারে ছেয়ে গেছে সিলেট। এ নিয়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা।

অনেকে বলছেন- সিলেটের রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ তৈরি হয়েছে।

তবে বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে- এটি বেনামি পোস্টার। বিষয়টি সম্পর্কে তাদের জানা নেই।  

গত কয়েক দিন ধরে সিলেটে দেখা যাচ্ছে ডা. জোবাইদা রহমানের ছবিসংবলিত পোস্টার। এতে জোবাইদা রহমান ছাড়াও জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবি আছে। এতে লেখা রয়েছে- ‘বাংলাদেশের অহংকার সিলেটবাসীর গর্ব ডা. জোবাইদা রহমানকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ মর্যাদা ও সম্মানের সংসদীয় আসন সিলেট-১ এর সাংসদ হিসেবে, আমরা অবহেলিত, বঞ্চিত সিলেটবাসী আমাদের অভিভাবক হিসেবে দেখতে চাই’।

সিলেট মহানগরের বন্দরবাজার, জিন্দাবাজার, লামাবাজার, শাহি ঈদগাহ, সোবহানীঘাট, সুবিদবাজার, আম্বরখানা, চৌহাট্টা ও শাহজালাল উপশহরসহ বিভিন্ন স্থানে দেখা গেছে এই পোস্টার।

গত বুধবার পোস্টার সাঁটানোর সময় মহানগরের শাহি ঈদগাহ এলাকা থেকে আটক করা হয় চা দোকানি আব্দুল কাদিরকে। পঞ্চাশোর্ধ্ব কাদির দীর্ঘদিন ধরে পোস্টার সাঁটানোর কাজ করে আসছিলেন। তাঁকে আটক করে নগর ছাত্রদলের কিছু নেতা পুলিশে দেওয়ার ভয় দেখান। এমনকি কাদিরের ভাষ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও আপলোড করা হয়। এ নিয়ে ছাত্রদলের একটি পক্ষ আরেক পক্ষকে দোষারোপ করেছে। তবে কে বা কারা পোস্টারটি ছাপিয়েছে তা জানা যায়নি। 

এই আসনে নির্বাচন করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে মাঠে কাজ করছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির ও সিসিকের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। এ অবস্থায় এমন পোস্টার দেখে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীর মধ্যে শুরু হয় ব্যাপক আলোচনা। কারা হঠাৎ এসব পোস্টার সাঁটাল, তাদের খুঁজতে থাকেন বিএনপির লোকজন। এখানে নির্বাচন করার জন্য মুক্তাদির ও আরিফুলের মধ্যে ঠান্ডা লড়াই চলছে। অনেকের ধারণা, সিলেট বিএনপিতে বিভক্তি থাকায় জিয়া পরিবারের বাইরে কেউ এই আসনে নির্বাচন করলে পরাজয়ের আশঙ্কা আছে। 

আরিফুল হক সম্প্রতি লন্ডন সফরে যান। সেখানে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠক করেন।

অন্যদিকে, মুক্তাদির যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। তাঁর ঘনিষ্ঠ সূত্র দাবি করেছে, তিনি যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষে লন্ডন যাবেন। সেখানে তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা করবেন।  

ডা. জোবাইদার পোস্টার নগরজুড়ে সাঁটানোর পর অনেকেই ফেসবুকে তাঁকে সিলেটের অভিভাবক হিসেবে আখ্যায়িত করে অভিনন্দন জানিয়েছেন। কেউ কেউ বলছেন- ডা. জোবাইদা সিলেট-১ আসনে নির্বাচন করলে ঐক্যবদ্ধ হবে সিলেটের বিএনপি। নিরসন হবে আরিফ-মুক্তাদির দ্বন্দ্বের

আরিফুল হক চৌধুরী লন্ডন থেকে আসার পর নিজ বাসায় এক বক্তব্য প্রদানকালে বলেন, ‘তারেক রহমান সিলেটের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা আগামী নির্বাচনে দলকে সিলেটের ১৯ আসন উপহার দিতে চাই। এ জন্য সিলেটের একজন অভিভাবক দরকার। আমি নেতার কাছে দাবি করেছি, এমন একজন নেতা দরকার, যাকে ঘিরে সিলেটে বিএনপি ঐক্যবদ্ধ হবে এবং সিলেট বিভাগের মানুষ আশার আলো দেখবে। মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের জন্য তারেক রহমান এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের মধ্যে কাউকে সিলেট-১ আসনে নির্বাচন করার দাবি জানিয়েছি। এতে সিলেটবাসীর ১৭ বছরের বঞ্চনার অবসান হবে।’

পোস্টার প্রসঙ্গে নগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী বলেন- ডা. জোবাইদা রহমান সিলেটের কৃতীসন্তান। তাঁর রাজনীতিতে আসা, নির্বাচন করা অথবা সিলেট-১ আসন চাওয়াটা কোনো অপরাধ নয়। কিন্তু পরিচয়বিহীন পোস্টার লাগিয়ে তাঁকে প্রার্থী করার দাবি জানানোর প্রক্রিয়াটি অস্পষ্ট। সিলেটজুড়ে সাঁটানো পোস্টারগুলো বেনামি। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা বিএনপির এক নেতা বলেন, সিলেট বিএনপি এই মুহূর্তে দু’ভাগে বিভক্ত। এক পক্ষে সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, আরেক পক্ষে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির অনুসারী। এ অবস্থায় তাদের প্রকাশ্য বিরোধ থামাতে হলে জিয়া পরিবারের কেউ নির্বাচন করলে সিলেটের রাজনীতির সমীকরণ অনেকটা পাল্টে যাবে। সত্যিকার অর্থে সিলেট বিএনপির শক্তিশালী ঘাঁটিতে পরিণত হবে।


(মূল রিপোর্ট : সমকাল)