সিলেটের নির্বাচনি ৬ আসনের হালচাল

কওমি কণ্ঠ ডেস্ক :

দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজনীতির চারণভূমি সিলেট। বিভাগের ১৯টি আসনের মধ্যে সিলেট জেলায় রয়েছে ৬টি। এর মধ্যে সিলেট-১ (মহানগর-সদর) হেভিওয়েটদের আসন হিসেবে বিবেচিত। হযরত শাহজালালের পুণ্যভূমির এই আসনে সব সময় হেভিওয়েট প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আসছেন। সব দলই শাহজালাল (রহ.)-এর মাজার জিয়ারতের মাধ্যমে জাতীয় নির্বাচনের প্রচার কার্যক্রম শুরু করে থাকেন।

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের লন্ডনে সফল বৈঠকের পর বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের দৌড়ঝাঁপ আবার শুরু হয়েছে। ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে হতে যাওয়া এ নির্বাচনে বিএনপির একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী রয়েছেন প্রতিটি আসনে। অন্যদিকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর একক প্রার্থী রয়েছেন। আর জুলাই বিপ্লবে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও অন্য ইসলামি দলগুলো এখনো তাদের মাঠ গোছাতে পারেনি। মূলত মাঠে এখন বিএনপি ও জামায়াত প্রার্থীরাই রয়েছেন।

৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পরপরই বিএনপির মনোনয়ন পেতে আগ্রহীরা তৎপরতা শুরু করেন। লন্ডন-ঢাকায় যোগাযোগ রাখছেন তারা এবং স্থানীয় পর্যায়ে শুভেচ্ছা বিনিময় ও নিজ সমর্থকদের মধ্যে আলোচনা করে মনোনয়ন পেতে কেন্দ্রের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টায় রয়েছেন। সে সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীও তাদের দলীয় ফোরামে আলোচনা করে আসনভিক্তিক প্রার্থীর নাম প্রকাশ করেছে।

আগামী নির্বাচনে সিলেট জেলার ছয়টি সংসদীয় আসনে বিএনপি চেয়ারপারসনের পাঁচজন উপদেষ্টা এবং তারেক রহমানের দুই উপদেষ্টাসহ দলীয় ২৬ জন মনোনয়ন পেতে তৎপরতা চালাচ্ছেন। যদিও এখন পর্যন্ত দলটির পক্ষ থেকে কারো নাম ঘোষণা করা হয়নি।

২০২৪-এর গণহত্যায় দায়ী নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের কোনো প্রার্থী মাঠে নেই। ‘আমি আর ডামি’খ্যাত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনও গণঅভ্যুত্থানের পর দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন।

সিলেট-১ (মহানগরী ও সদর উত্তর) :
একটি ‘মিথ’ প্রচলিত রয়েছে- ‘সিলেট-১ আসনে যে দলের প্রার্থী বিজয়ী হন, সে দলই সরকার গঠন করে। কাকতালীয়ভাবে এ ধারাই চলে আসছে। এই আসনে দলীয় মনোনয়ন পেতে বিএনপি চেয়ারপারসনের দুই উপদেষ্টা সরাসরি লড়াইয়ে নেমেছেন। তাদের একজন খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির। তিনি ২০১৮ সালের নির্বাচনে এ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ছিলেন। অন্যজন সিলেট সিটি করপোরেশনে দুবারের নির্বাচিত মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। সম্প্রতি তিনি লন্ডনে গিয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে সাক্ষাতের পর নির্বাচনের আগ্রহ ব্যক্ত করেছেন।

এ ছাড়া জিয়া পরিবারের, বিশেষ করে সিলেটের কৃতী সন্তান বেগম খালেদা জিয়ার পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমানকে প্রার্থী করার জন্য একটি মহল চেষ্টা করলেও তা সফল হয়নি। প্রার্থিতার আহ্বান জানিয়ে মিছিল ও পোস্টারিং করা হলেও জোবাইদা রহমান সাড়া দেননি। ১৭ বছর পর শাশুড়ি বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেশে ফিরে ঢাকায় অবস্থান করেই তিনি লন্ডনে ফিরে গেছেন। নির্বাচনে সিলেট জেলায় প্রতি আসনে গড়ে পাঁচজন করে প্রার্থী রয়েছেন।

সিলেট-১ আসনে জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী মাওলানা হাবিবুর রহমান এবার প্রথমবারের মতো শাহী ঈদগাহ ময়দানে ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করেন। এ ছাড়া সভা-সমাবেশ ও গণসংযোগ করছেন নগরীতে। নতুন দল এনসিপি ও গণঅধিকার পরিষদের কাউকে এখনো মাঠে তৎপর দেখা যায়নি।

সিলেট-১ আসনে জামায়াতের প্রার্থী বদল করে দলটির কেন্দ্রীয় মসলিসে শূরা সদস্য ও জেলা আমির এবং ইবনে সিনা হাসপাতাল সিলেটের ম্যানেজমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান মাওলানা হাবিবুর রহমানকে নতুন প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এর আগে কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সাবেক সভাপতি এহসানুল মাহবুব জুবায়ের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে সিদ্ধান্ত ছিল। মাওলানা হাবিবুর রহমান ২০১৮ সালের নির্বাচনে সিলেট-৬ আসন (গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজার) থেকে জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তিনি বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডেও সক্রিয়ভাবে জড়িত।

জাতীয় নাগরিক পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক অর্পিতা শ্যামা দেব বলেন, ‘আসনভিক্তিক কোনো প্রার্থীর ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এখনো এনসিপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি আমরা করতে পারিনি। তবে নিজ নিজ এলাকায় কয়েকজন গণসংযোগ করছেন।’

সিলেট-১ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতা, জেলা বিএনপির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক এবং প্রবাসী বিএনপি নেতারা। প্রবাসী মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মানবাধিকারবিষয়ক উপদেষ্টা লন্ডনপ্রবাসী ব্যারিস্টার এমএ সালাম, তারেক রহমানের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা লন্ডনপ্রবাসী হুমায়ুন কবির, আমেরিকাপ্রবাসী মামুনুর রশীদ (চাকসু মামুন), যুক্তরাজ্যপ্রবাসী মরহুম হারিছ চৌধুরীর মেয়ে ব্যারিস্টার সামিরা তানজিন চৌধুরী, যুক্তরাজ্যের টাওয়ার হেমলেটের সাবেক কাউন্সিলর অহিদ আহমদ ও যুক্তরাজ্য বিএনপির সাবেক সভাপতি মরহুম কমর উদ্দিনের মেয়ে যুক্তরাজ্যের কাউন্সিলর পপি খান।

সিলেট-২ (বিশ্বনাথ-ওসমানীনগর) :
জেলার অন্যতম আলোচিত আসন সিলেট-২ (ওসমানীনগর ও বিশ্বনাথ)। এ আসনে সাবেক এমপি ছিলেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক ছাত্রনেতা এম ইলিয়াস আলী। তিনি গুমের শিকার হওয়ার পর ২০১৮ সালের নির্বাচনে তার সহধর্মিণী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ডেপুটি রেজিস্ট্রার তাহসিনা রুশদীর লুনাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়; তবে তিনি নির্বাচন করতে পারেননি। পরে বিএনপি এই আসনে জোটের প্রার্থী হিসেবে গণফোরামকে ছেড়ে দেয়। বিএনপির সমর্থনে গণফোরামের মোকাব্বির হোসেন খান এ আসনে বিজয়ী হন।

প্রবাসী অধ্যুষিত আসনটিতে বিএনপির নেত্রী হিসেবে একক আধিপত্য লুনার। এতদিন থেকে তিনি ছিলেন এই আসনে একক মনোনয়নপ্রত্যাশী। তবে সম্প্রতি তারেক রহমানের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা লন্ডনপ্রবাসী হুমায়ুন কবিরের নামও তার অনুসারীদের মধ্যে আলোচিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে হুমায়ুন কবির তার নির্বাচনি এলাকায় যাতায়াত বাড়িয়েছেন এবং এলাকাবাসীর সঙ্গে পরিচিত হচ্ছেন। তাকেই ভাবা হচ্ছে এই লুনার দলীয় প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে।

তবে মাঠে লুনাই সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। বিগত দিনে নির্বাচিত মোকাব্বির হোসেন এবং ২৪ সালের ডামি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ও প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী- এ দুজনই দেশ ছেড়ে পালিয়ে রয়েছেন। নির্বাচনি এলাকায় তাদের নিয়ে কোনো আলোচনা নেই।

এদিকে আসনটিতে জামায়াত প্রার্থী হিসেবে তালিকায় রয়েছেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও জেলা শাখার নায়েবে আমির অধ্যাপক আব্দুল হান্নান। ছাত্র-জনতার বিপ্লবের পর থেকে দলের সাংগঠনিক ভিত্তি শক্ত করা এবং ভোটার ও কর্মী টানতে তিনি নির্বাচনি এলাকায় কাজ করছেন।

এ ছাড়া খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব সাবেক ছাত্রনেতা মুহাম্মদ মুনতাসির আলী দলীয় অথবা জোটের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেতে সক্রিয় রয়েছেন। বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠান, ঈদ উৎসবে এলাকায় গণসংযোগ এবং মতবিনিময় করছেন তিনি। তবে নির্বাচন ঘনিয়ে এলে রাজনৈতিক দলগুলোর সম্ভাব্য প্রার্থীর সংখ্যা আরো বাড়তে পারে।

সিলেট-৩ (দক্ষিণ সুরমা, বালাগঞ্জ ও ফেঞ্চুগঞ্জ) :
সিলেট-৩ আসনে এবার বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থীর সংখ্যা বেশি। তবে জামায়াত ও খেলাফত মজলিসের একক প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য মাঠে রয়েছেন।

বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন জেলা সভাপতি এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) সিন্ডিকেট সদস্য আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী, যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এম এ মালিক, বিএনপির কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের মানবাধিকারবিষয়ক উপদেষ্টা ব্যারিস্টার এমএ সালাম, সিলেট মহানগর বিএনপির সহসভাপতি ব্যারিস্টার রিয়াসাদ আজিম হক আদনান ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আবদুল আহাদ খান জামাল।

জামায়াতের দলীয় প্রার্থী হিসেবে প্রচার চালাচ্ছেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মাওলানা লোকমান আহমদ। এছাড়া খেলাফত মজলিসের মনোনয়ন পেতে আগ্রহী দলটির জেলার সাধারণ সম্পাদক ব্যবসায়ী দিলোয়ার হোসেন।

নতুন দল এনসিপির দলীয়ভাবে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত না হলেও সিলেট-৩ আসনে নির্বাচন করার আগ্রহ রয়েছে ব্যারিস্টার নুরুল হুদা জুনেদের। তিনি যুক্তরাজ্যপ্রবাসী ও দলটির কেন্দ্রীয় নেতা।

এ আসনে বিএনপিদলীয় সাবেক এমপি শফি আহমদ চৌধুরী ডামি নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে দল থেকে বহিষ্কৃত হন। আর আওয়ামী দলীয় ডামি এমপি হাবিবুর রহমান হাবিব ৫ আগস্টের পর লন্ডনে পালিয়ে গেছেন।

সিলেট-৪ (গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর ও কোম্পানীগঞ্জ) :
পর্যটন এলাকা হিসেবে খ্যাত কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুর নিয়ে সিলেট-৪ আসন। এখানে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাসহ অন্তত পাঁচজন এবং জামায়াতের একক প্রার্থী হিসেবে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন মাঠে রয়েছেন। অন্য দলগুলোর কাউকে এখনো তাদের কার্যক্রম শুরু করতে দেখা যায়নি।

বিশাল সম্ভাবনাময় এলাকা নিয়ে গঠিত সিলেট-৪ আসনে এবার প্রার্থীর সংখ্যা বেড়েছে। গত ১৫ বছরের অবৈধ নির্বাচনে এককভাবে বিজয়ী হয়েছে আওয়ামী লীগ। এ আসনের সাবেক এমপি ও প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী এমরান আহমদ বর্তমানে বিভিন্ন অপরাধের কারণে কারাগারে রয়েছেন। সম্ভাবনাময় এই আসনের প্রাকৃতিক সম্পদ লুটপাট করেছেন এমরান ও তার আস্থাভাজনরা।

আসন্ন নির্বাচনে এই আসনের দিকে চোখ পড়েছে বিএনপির একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশীর। ৫ আগস্টের পর থেকে নির্বাচনি লক্ষ্য নিয়ে সভা-সমাবেশ ও বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন তারা। কেন্দ্রের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য ঢাকায় নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং তৃণমূলের সমর্থনের জন্য নানা কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন তারা।

এ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশীর মধ্যে রয়েছেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগ|ঠনিক সম্পাদক ও সাবেক ছাত্রনেতা মিফতাহ্ সিদ্দিকী, মহানগরের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম। প্রবাস থেকে ফিরে নির্বাচনের আগ্রহ নিয়ে তৎপরতা চালাচ্ছেন সেলিম। তিনি ঢাকায় মহাসচিবসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে দেখা করে মনোনয়নের ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এ ছাড়া এ আসনে মনোনয়ন চান জেলা বিএনপির উপদেষ্টা ও গোয়াইনঘাটের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল হাকিম চৌধুরী।

এছাড়া খেলাফত মজলিসের (ঘড়ি) কেন্দ্রীয় নেতা ইসলামি বক্তা আলী হাসান উসামা ও নতুন দল এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতা ফয়ছল আহমেদ রুবেল এ আসনে নির্বাচন করবেন বল গুঞ্জন রয়েছে।

সিলেট-৫ (জকিগঞ্জ-কানাইঘাট) :
জকিগঞ্জ ও কানাইঘাট নিয়ে গঠিত সিলেট-৫ আসন থেকে বিএনপিদলীয় কোনো প্রার্থী ১৯৯১ সালের পর থেকে জোট ও সমঝোতার কারণে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ পাননি। শুধু ১৯৯১ সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব মরহুম হারিছ চৌধুরী নির্বাচন করে পরাজিত হন। এরপর থেকে জোটের প্রার্থীদেরই ছেড়ে দেওয়া হয় আসনটি। এবার বিএনপি প্রার্থীরা আর ছাড় দিতে চাচ্ছেন না। দলীয় প্রার্থী মনোনয়নের পক্ষে তারা একজোট হয়েছেন।

আসনটিতে জোটপ্রার্থী হিসেবে একবার নির্বাচিত হন জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা অধ্যক্ষ ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী। পরে তিনি আবারও এ আসনে জোটের মনোনয়ন পান। ২০১৮ সালে এ আসনে জোটের অংশ হিসেবে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সভাপতি প্রখ্যাত আলেম শায়খুল হাদিস মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

আসন্ন নির্বাচনে এ আসনে মনোনয়ন চেয়ে বিএনপির অত্যন্ত ৪ জন তৎপরতা চালাচ্ছেন। তারা হলেন জেলা বিএনপির সহসভাপতি মামুনুর রশীদ (চাকসু মামুন), জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান পাপলু, কানাইঘাট উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আশিক উদ্দিন চৌধুরী ও হারিছ চৌধুরীর কন্যা যুক্তরাজ্যপ্রবাসী ব্যারিস্টার সামিরা তানজিন চৌধুরী।

এদিকে সিলেট-৫ আসনে জামায়াতে ইসলামীর একক প্রার্থী হিসেবে জেলার নায়েবে আমির হাফেজ আনোয়ার হোসেন খান কাজ করে যাচ্ছেন। অন্য ইসলামি দলগুলো থেকেও এ আসনে প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। 

সিলেট-৬ (বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জ) :
বিপুলসংখ্যক প্রবাসী অধ্যুষিত গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজারে অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার হেভিওয়েটসহ সবচেয়ে বেশি ব্যক্তি বিএনপির মনোনয়নের লড়াইয়ে রয়েছেন। দেশি ও প্রবাসী বিএনপির বিভিন্ন পদধারী অন্তত ৯ জন মনোনয়নের জন্য উচ্চপর্যায়ে লবিং শুরু করেছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই শিল্পপতি, বিত্তশালী ও লন্ডন-আমেরিকা প্রবাসী রয়েছেন।

আসনটিতে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন ২০১৮ সালে দলের মনোনীত প্রার্থী বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ফয়সল আহমদ চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. মো. এনামুল হক চৌধুরী, জেলা বিএনপির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরী, সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য আবুল কাহের চৌধুরী শামীম।

এ ছাড়াও রয়েছেন যুক্তরাজ্যের টাওয়ার হেমলেটের সাবেক কাউন্সিলর অহিদ আহমদ, জেলা বিএনপির শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সহসম্পাদক তামিম ইয়াহিয়া আহমদ, জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক চিত্রনায়ক হেলাল খান, যুক্তরাজ্য বিএনপির সাবেক সভাপতি ও জিয়া পরিবারের ঘনিষ্ঠজন মরহুম কমর উদ্দিনের মেয়ে যুক্তরাজ্যের কাউন্সিলর পপি খান এবং সাবেক এমপি ড. সৈয়দ মকবুল হোসেন লেছু মিয়ার মেয়ে ব্যবসায়ী সামিরা হোসেন।

এদিকে পপি খান ও সামিরা হোসেন সম্প্রতি নিজ নিজ এলাকায় এসে তাদের বাবার অনুসারী, শুভাকাঙ্ক্ষী এবং দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে সাক্ষাৎ ও মতবিনিময় করে নিজেদের প্রার্থিতার জানান দিয়েছেন।

এ আসনে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ও ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন। তাকে গ্রিন সিগন্যাল দেওয়ার পর তিনি নির্বাচনি এলাকায় রমজান থেকে ইফতার মাহফিল, গণসংযোগসহ দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈঠকে সময় দিচ্ছেন।

আসনটিতে বিএনপির পাশাপাশি অন্যান্য প্রার্থীও দলীয় মনোনয়নের জন্য মাঠে তৎপর; যোগাযোগ রাখছেন কেন্দ্রের সঙ্গেও। তবে এনসিপি ও ধর্মীয় দলগুলোর প্রার্থীরা এখনো মাঠে নামেননি।

এদিকে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে স্থানীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন বাংলাদেশ ন্যাপের চেয়ারম্যান এমএন শাওন সাদেকী ও গণঅধিকার পরিষদের অ্যাডভোকেট জাহিদুর রহমান।


(মূল রিপোর্ট : আমার দেশ)