এনসিপি’র ‘তোপের মুখে’ জামায়াত

কওমি কণ্ঠ ডেস্ক :  

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর ‘তোপের মুখে’ পড়েছে জামায়াত। রোববার (১৯ অক্টোবর) জামায়াতের চলমান আন্দোলনকে প্রতারণা বলে আখ্যা দিয়েছেন এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।

তবে জামায়াত এই বক্তব্যকে ‘বালখিল্য’ বলেছে।

জুলাই সনদ স্বাক্ষর এবং এর বাস্তবায়ন নিয়ে মতভিন্নতা থেকে এনসিপির এমন প্রতিক্রিয়া বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিএনপি ও জামায়াতসহ ২৫টি দল জুলাই সনদে স্বাক্ষর করেছে। এনসিপি সনদে স্বাক্ষর করেনি। 

জামায়াত ও এনসিপি সূত্র জানায়, এনসিপি চেয়েছিল জামায়াতও যেন জুলাই সনদে স্বাক্ষর না করে। সে অনুযায়ী দলটির সঙ্গে একাধিকবার আলোচনাও করেছে তারা। এনসিপির জুলাই সনদে স্বাক্ষর না করার সিদ্ধান্তকে জামায়াত সরকার ও বিএনপির ওপর ‘চাপ রাখার কৌশল’ হিসেবে সমর্থন দেয়। কিন্তু জামায়াত নিজে এই ‘চাপ-কৌশলে’ যুক্ত হতে রাজি হয়নি। 

জুলাই সনদ বাস্তবায়নে এনসিপির গণপরিষদ গঠনের দাবিকে জামায়াত সমর্থন করে না। আবার জামায়াতের নিম্নকক্ষে পিআরের দাবিকে এনসিপি সমর্থন করে না। এই মতপার্থক্য নিয়েও দুদল এতদিন কাছাকাছি অবস্থানে ছিল। ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে দলগুলোর সংলাপের সময় কার্যত জামায়াতকে সমর্থন দিয়ে আসছিল এনসিপি। 

রবিবার ফেসবুকে এক পোস্টে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, জামায়াতে ইসলামীর কথিত সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের (পিআর) আন্দোলন একটি সুচিন্তিত রাজনৈতিক প্রতারণা ছাড়া আর কিছু নয়। তিনি বলেন, ঐকমত্য কমিশনের সংস্কার প্রক্রিয়া এবং জাতীয় সংলাপকে গণঅভ্যুত্থানের আলোকে সংবিধান ও রাষ্ট্র পুনর্গঠনের প্রকৃত প্রশ্ন থেকে ভিন্ন দিকে সরিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে পরিকল্পিতভাবে এটা করা হচ্ছে। 

সংবিধানের একটি সুরক্ষা হিসেবেই ভোটের আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ভিত্তিতে উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠার বিষয়টি মৌলিক সংস্কারের অন্যতম দাবি ছিল বলে উল্লেখ করেন নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমরা এ ধরনের মৌলিক সংস্কার এবং বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে জুলাই সনদের আইনি কাঠামো তৈরি করার জন্য একটি আন্দোলন গড়ে তুলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু জামায়াত এবং তার সহযোগীরা এটা ছিনতাই করেছে। তারা একে একটি কাঠামোগত পিআর বিষয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে ফেলেছে এবং এটাকে তাদের ক্ষুদ্র দলীয় স্বার্থ উদ্ধারের জন্য দরকষাকষির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে।

জামায়াতে ইসলামী জুলাই অভ্যুত্থানের আগে ও পরে কখনোই সংস্কার আলোচনায় যুক্ত হয়নি বলে অভিযোগ করেন নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, তারা কোনো কার্যকর প্রস্তাব দেয়নি, কোনো সাংবিধানিক দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করেনি এবং গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের প্রতি কোনো অঙ্গীকারও দেখায়নি।

জামায়াতে ইসলামীর সমালোচনা করে নাহিদ ইসলাম বলেন, ঐকমত্য কমিশনের অধীনে সংস্কারের বিষয়ে তারা আকস্মিক যে অনুমোদন দিয়েছে, সেটা সংস্কার আকাঙ্ক্ষার ফল নয়; বরং একটি কৌশলগত অনুপ্রবেশ। সংস্কারবাদের ছদ্মবেশে একটি রাজনৈতিক নাশকতা।

এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, আজ বাংলাদেশের জনগণ এই প্রতারণা স্পষ্টভাবে বুঝে গেছে। তারা সত্যের পক্ষে জেগে উঠেছে এবং আর ভুয়া সংস্কারবাদী বা ছলনাকারীদের দ্বারা প্রতারিত হবে না।

আল্লাহ এবং এ দেশের সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী জনগণ আর কখনোই অসৎ, সুযোগসন্ধানী এবং নৈতিকভাবে দেউলিয়া শক্তিকে তাদের শাসন করার সুযোগ দেবে না বলেও লিখেছেন নাহিদ ইসলাম।

এদিকে, এক বিবৃতিতে নাহিদ ইসলামের বক্তব্যকে অস্পষ্ট ও বিভ্রান্তিকর দাবি করেছে।