কওমি কণ্ঠ ডেস্ক :
গরমে যেমন বাড়ে বিদ্যুতের চাহিদা, তেমনি লোডশেডিং। সম্প্রতি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে সমস্যার কারণে ভোগান্তির শিকার হন গ্রাহকরা। সেই সমস্যার উত্তরণ হলেও গরম ও চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ সরবরাহ কম পাওয়ার কারণে ভোগান্তি পিছু ছাড়ছে না।
এমন পরিস্থিতিতে গোদের ওপর বিষফোড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও ইজিবাইক। এসব রিকশা ও ইজিবাইক চার্জ করতে প্রতিটির পেছনে বিদ্যুৎ খরচ হয় এক থেকে আট কিলোওয়াট। সেই হিসাবে গড়ে পাঁচ কিলোওয়াট করে ধরলে প্রতিদিন সিলেট জেলায় প্রায় ১৫ হাজার অটোরিকশা ও ইজিবাইক চার্জের পেছনে বিদ্যুৎ খরচ হচ্ছে ৭৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। যার মারাত্মক প্রভাব পড়ছে বিদ্যুৎ সরবরাহে।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো) সিলেটের তথ্যমতে, সিলেট জেলায় গরমের সময়ে বিদ্যুতের চাহিদা ১৮০ থেকে ২২০ মেগাওয়াট। সরবরাহ হয়ে থাকে ১৪০ থেকে ১৬০ মেগাওয়াট পর্যন্ত। সে হিসাবে দৈনিক ঘাটতি থাকে ৪০ থেকে ৬০ মেগাওয়াট। অথচ ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইকের পেছনে বিদ্যুৎ খরচ হচ্ছে ঘাটতির চেয়েও বেশি। সম্প্রতি সিলেট নগরীতে ব্যাটারিচালিত যানবাহনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণে সড়ক ব্যবস্থায়ও অরাজকতা সৃষ্টি হচ্ছে।
এ অবস্থায় গত সোমবার থেকে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে অভিযান শুরু করে জেলা প্রশাসন, সিটি করপোরেশন ও পুলিশ বিভাগ। গত তিন দিনে ৬৯টি যানবাহন আটক করে তারা। এর মধ্যে ব্যাটারিচালিত রিকশার সংখ্যা ৪৪। পাশাপাশি শামীমাবাদ এলাকাসহ একাধিক স্থানে গ্যারেজের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। জব্দ করা হয় ১৮০টি চার্জিং পয়েন্ট ও ১০টি মিটার।
রিকশা আটক ও বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করার অভিযান শুরু হলে এর প্রতিবাদে ক্ষুব্ধ হয়ে মাঠে নামেন ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকরা। বৃহস্পতিবার সিলেট নগরীতে ব্যাটারিচালিত রিকশা মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ব্যানারে শতাধিক চালক রিকশার অনুমোদন, অভিযান বন্ধ, আটক রিকশা ছেড়ে দেওয়াসহ বিভিন্ন দাবিতে বিক্ষোভ করেন। অভিযোগ উঠেছে, চালকরা অবৈধ আবদার নিয়ে রাস্তায় নামার পেছনে নগরীর বিভিন্ন রিকশা গ্যারেজ মালিক এবং রাজনৈতিক নেতাদের মদদ রয়েছে।
বৃহস্পতিবার শ্রমিকদের আন্দোলনকালে মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমদাদ হোসেন চৌধুরী তাদের পক্ষে অবস্থান নেন। তিনি জেলা প্রশাসকের সামনে শ্রমিকদের উদ্দেশে বক্তব্য দিয়ে তাদের শান্ত করেন এবং দাবির বিষয়ে আশ্বাস দেন। তাঁর উপস্থিতি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে নানামুখী আলোচনা-সমালোচনা।
এ বিষয়ে আইনজীবী মইনুল হক বুলবুল তাঁর ফেসবুকে করা এক পোস্টে উল্লেখ করেন, সাদাপাথরকাণ্ডে পাথর লুটেরার তালিকায় মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমদাদ হোসেন চৌধুরীর নাম দেখার পর অনেকের মতো তিনিও বিশ্বাস করেননি। অবৈধ ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের পেছনেও দেখা গেল তাঁকে। ইতিবাচক উদ্যোগকে প্রশ্নবিদ্ধ করে ব্যর্থ বানাতে তিনি আর পর্দার আড়ালে থাকতে পারলেন না।
এদিকে বিষয়টিকে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে দাবি করে এমদাদ চৌধুরী জানান, রিকশার পক্ষে নয়, শ্রমিকদের শান্ত করতে এবং সমস্যার সমাধান নিশ্চিতের দাবি নিয়ে তিনি কথা বলেছেন।
শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নগরীর ঘাষিটুলা বেতবাজার এলাকায় এক ব্যবসায়ীর শতাধিক অটোরিকশা ও গ্যারেজে চার্জিং পয়েন্ট বসিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। তাঁর মতো অনেকে ব্যবসা করছেন। সেইসব গ্যারেজ মালিক অভিযান শুরুর পর শ্রমিকদের মতো বেকায়দায় পড়েন। শ্রমিকরা মাঠে নামার পেছনে তাদের সমর্থন রয়েছে।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল কাদির জানান, কী পরিমাণ বিদ্যুৎ ব্যাটারিচালিত যানের পেছনে খরচ হয় তার হিসাব নেই। তবে সরবরাহে প্রভাব পড়ছে।
(মূল রিপোর্ট : সমকাল)