কওমি কণ্ঠ রিপোর্টার :
‘দস্তগীর ভাই, আমরা সাংবাদিক; আমাদের গুলি কইরেন না।’ দু’হাত উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মো. মোহিদ হোসেন তখন জানতেন না- তার আর্তি বাতাসে মিলিয়ে যাবে। চোখের সামনেই গুলিতে লুটিয়ে পড়েন তার সহকর্মী- নয়া দিগন্তের সিলেট প্রতিনিধি এটি এম তুরাব।
সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) দৈনিক ‘একাত্তরের কথা’ পত্রিকার ফটো সাংবাদিক মো. মোহিদ হোসেন সেই বিভীষিকাময় দিনের সাক্ষ্য দিয়েছেন অন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে।
জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিনজনের বিরুদ্ধে দশম দিনে সোমবার ৩০তম সাক্ষী হিসেবে মোহিদ হোসেন জবানবন্দী দেন।
ট্রাইব্যুনালের কাছে সিলেটের এই ফটো সাংবাদিক বলেন- ‘২০২৪ সালের ১৯ জুলাই ছিল শুক্রবার। ওই দিন বিএনপির দেশব্যাপী ঘোষিত গায়েবানা নামাজে জানাজার কর্মসূচি ছিল। তারই অংশ হিসেবে সিলেটের মধুবন পয়েন্টের নিকটে অবস্থিত কালেক্টরেট জামে মসজিদে জুমার নামাজের পর একটি গায়েবানা জানাজা নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। আমি সংবাদ সংগ্রহের জন্য যাই। ১৯ জুলাইয়ের আগে আন্দোলনে যারা নিহত হয়েছেন তাদের গায়েবানা জানাজা নামাজ অনুষ্ঠিত হয় এবং নামাজে জানাজা শেষে একটি শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি জিন্দাবাজারের দিকে যাওয়ার সময় পুলিশ পেছন দিক থেকে অতর্কিতে গুলি বর্ষণ করে। আমি ও আমার সহকর্মী সাংবাদিক আবু তুরাব পেশাগত দায়িত্ব পালন করছিলাম। পুলিশ আমাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ছিল। আমি হাত উঁচিয়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে বলছিলাম, দস্তগীর ভাই (এডিসি) আমরা সাংবাদিক, আমাদের গুলি কইরেন না। তারপরও পুলিশ গুলি ছুড়তে থাকে।’
তিনি বলেন- ‘পুলিশের গুলিতে আমার সহকর্মী নয়া দিগন্ত পত্রিকার ফটো সাংবাদিক আবু তুরাব গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে বসে পড়েন। তাকে আমি রিকশায় এবং পরে সিএনজিতে সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের লোকজন চিকিৎসায় বাধা দেয়ায় তাকে ইবনে সিনা হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে ওই দিনই সন্ধ্যা ৬টা ৪৫ মিনিটে তিনি মারা যান। পুলিশের এডিসি সাদিক কাউসার দস্তগীর, কোতয়ালি থানার এসি মিজানুর রহমান, কোতয়ালি থানার ওসি মহিউদ্দিন আরো অনেকে গুলি বর্ষণ করে। ওই ঘটনার একটি ভিডিও সংগ্রহ করেছি। ওই ভিডিও সম্বলিত একটি পেনড্রাইভ অদ্য ট্রাইব্যুনালে দাখিল করলাম। ভিডিওটি অদ্য ট্রাইব্যুনালে প্রদর্শিত হয়। ভিডিওটিতে বিক্ষোভ মিছিলের ওপর পুলিশের গুলি বর্ষণের দৃশ্য এবং গুলিবিদ্ধ সাংবাদিক আবু তুরাবকে মাটিতে বসে থাকতে এবং পরে তাকে এই সাক্ষী কর্তৃক রিকশায় হাসপাতালে নিয়ে যেতে দেখা যায়। আমি তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে জবানবন্দী দেয়ার পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আলজাজিরা, বিবিসির ডকুমেন্টারির মাধ্যমে জানতে পারি যে, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুলিশকে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি করার নির্দেশ দিয়েছেন। পরে আরো জানতে পারি এ ঘটনার জন্য আরো দায়ী তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পুলিশের প্রধান, স্বরাষ্ট্রসচিবসহ আরো অনেকে।’
সাংবাদিক মো. মোহিদ হোসেনের পর সিলেটের আরেক ফটো সাংবাদিক হুমায়ূন কবির লিটন মামলার ৩১তম সাক্ষী হিসেবে সাক্ষী দেন। তিনি বলেন- ‘আমি আগের সাক্ষীর বক্তব্যই উপস্থাপন করতে চাই।’
তখন আদালত এটাকে পিডব্লিউ ডেন্ডার হিসেবে গ্রহণ করেন।
(মূল রিপোর্ট : নয়াদিগন্ত)