কওমি কণ্ঠ ডেস্ক :
আফগানিস্তানের তালেবান সরকারকে রাশিয়ার আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতির পর সারা বিশ্বে আলোচনার ঝড় উঠেছে। কোনো বিশ্লেষক বলছেন, তালেবান সরকারকে আগামীতে চীন, ইরান এমনকি ভারতও স্বীকৃতি দেবে। আর এর মাধ্যমে দেশটি অর্থনৈতিকভাবে উন্নতি লাভ করবে। অবশ্য কোনো কোনো বিশ্লেষক ভিন্ন কথাও বলছেন।
পাকিস্তানি গণমাধ্যম জিও নিউজ এক প্রতিবেদনে স্থানীয় জনগণের মতামত তুলে ধরেছে। সেখানে কিছু আফগান স্বীকৃতির বিষয়টিকে উন্নতির সুযোগ হিসেবে দেখ হলেও, কেউ কেউ সন্দিহান, যে এটি তাদের জীবনে প্রকৃত কোনো কাজে আসবে কিনা।
২০২১ সালে মার্কিন সমর্থিত সরকারকে উৎখাত করে তালেবানরা ক্ষমতায় আসার পর, প্রায় চার বছর ধরে কোনো রাষ্ট্র তাদের সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি।
কাবুলের বাসিন্দা ৫৮ বছর বয়সী গুল মোহাম্মদ বলেন, আফগানিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতিতে, এত সব চ্যালেঞ্জের মাঝে, সবাই উদ্বিগ্ন। যদি বিশ্ব আমাদের স্বীকৃতি দেয়, আমরা খুশি হব। ছোট ছোট বিষয়ও এখন অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
১৯৭৯ সালে আফগানিস্তানে সোভিয়েত আগ্রাসনের সময় সবকিছু হারিয়ে পাকিস্তানে শরণার্থী হয়ে যাওয়ার তিক্ত স্মৃতি থাকলেও, তিনি স্বীকার করেন, এখন অগ্রাধিকারগুলো ভিন্ন।
৬৭ বছর বয়সী অবসরপ্রাপ্ত পাইলট জামালউদ্দিন সাইয়ার ভবিষ্যদ্বাণী করেন, এখন বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি বিকশিত হবে। তিনি আরো বলেন, পশ্চিমা ও পূর্বা—উভয় ধরনের দেশগুলোকেই ‘ইসলামিক আমিরাতের বিরুদ্ধে প্রচার বন্ধ করে সরকারকে স্বীকৃতি দেওয়া উচিত’।
রাশিয়ান ও আফগান কর্মকর্তারা এই পদক্ষেপকে অর্থনীতি ও নিরাপত্তা ক্ষেত্রে গভীর সহযোগিতার একটি সুযোগ হিসেবে প্রশংসা করেছেন।
তালেবানদের ক্ষমতা গ্রহণের পর পাকিস্তানে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ বেড়ে যাওয়ায় তাদের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক খারাপ হয়েছে। এমনকি গত বছর আফগানিস্তানে সক্রিয় আইএস (দায়েশ) শাখা মস্কোর একটি কনসার্ট হলে হামলা চালিয়ে ১৩৭ জনকে হত্যা করে।
একটি দেশে যেখানে মতপ্রকাশ ও প্রতিবাদ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত, সেখানে কাবুলের কিছু বাসিন্দা তালেবান সরকারের সমালোচনা করতে ভয় পাচ্ছেন।
আতেফ (ছদ্মনাম), একজন ২৫ বছর বয়সী বেকার যুবক, বলেন, আফগানিস্তান ও রাশিয়ার মধ্যে সম্পর্ক উন্নত হলেও সাধারণ আফগানদের জীবনে এর কোনো ইতিবাচক প্রভাব পড়বে না।
তিনি বলেন, আমি মনে করি আফগানিস্তান আবার রাশিয়ার ফাঁদে পড়বে, সমস্যা বাড়বে এবং সাধারণ মানুষের জন্য কিছুই পরিবর্তন হবে না। মানুষ এখন কষ্টে আছে, স্বীকৃতি পেলেও থাকবে।
নরওয়ের বাসিন্দা আফগান নারী অধিকারকর্মী হোদা খামোশ রাশিয়ার পদক্ষেপকে গুরুত্ব না দিয়ে বলেন, মানবাধিকার সংস্থাগুলো এখন আফগানিস্তানে জেন্ডার অ্যাপারথেইডকে স্বীকৃতি দেওয়ার চেষ্টা করছে, কারণ তালেবান একটি দমনমূলক সরকার যারা নারীদের বিরুদ্ধে। তাই এই স্বীকৃতিগুলোর কোনো সুফল হবে না।