সিলেটে প্রবাসীর স্ত্রীর সঙ্গে যা ঘটলো

  • সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন

কওমি কণ্ঠ ডেস্ক : 

একজন ধর্মের ভাইয়ের প্রতিশ্রুতি আর পারিবারিক সম্পর্কের উপর ভরসা করে নিজের স্বপ্ন আর সঞ্চয় সব হারিয়েছি- চোখের পানি ধরে রেখে এভাবেই নিজের কষ্টের কথা সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরলেন সিলেট মহানগরে বাসিন্দা হাসনা বেগম।

সোমবার (১৯ মে) সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি জানান, তার প্রবাসী স্বামী মুহিবুর রহমান দেশে ফিরে স্থায়ীভাবে একটি জায়গা কিনতে চাইলে প্রতিবেশী কামাল আহমদ নামের এক ব্যক্তি তার নিজের জায়গা বিক্রির প্রস্তাব দেন। আমার স্বামী মুহিবুর রহমানের জায়গা পছন্দ হলে আলাপ আলোচনা সাপেক্ষে জায়গার মূল্য ষাট লক্ষ টাকা নির্ধারণ করা হয়। পারিবারিক ঘনিষ্ঠতা ও ধর্মীয় সম্পর্কের কারণে হাসনা বেগম ও তার স্বামী সহজেই রাজি হয়ে যান।

সিলেট নগরীর নরসিংটিলা এলাকার বাসিন্দা ও গ্রীস প্রবাসী মুহিবুর রহমানের স্ত্রী হাসনা বেগম এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেছেন, জমি বিক্রির নামে প্রতারণা করে তার কাছ থেকে ৩৩ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছেন সিলেট মহানগরীর বাগবাড়ী নরসিংটিলার একতা ৪৭/৪-বি বাসার মালিক কামাল আহমদ (৫৫) পিতা- আব্দুল বারিক, তার স্ত্রী রুহেনা বেগম (৩০)। শুধু তাই নয়, পরবর্তীতে প্রতারণার বিষয়টি প্রকাশ হলে তাকে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয় বলে জানান তিনি।

হাসনা বেগম বলেন, “পারিবারিক ও ধর্মীয় সম্পর্কের ভিত্তিতে কামাল আহমদের ওপর ভরসা করে আমার স্বামী জায়গা কিনতে সম্মত হন। ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে তিন দফায় সাক্ষী তোতা মিয়া, আমার ভাসুর মাহবুব হোসেন জীবন ও আমার পরিবারের সবার উপস্থিতিতে কামাল আহমদকে ৩৩ লক্ষ টাকা পরিশোধ করি। কথা ছিল, পরের সপ্তাহে অবশিষ্ট টাকা পরিশোধ ক্রমে আমার স্বামীকে জমি রেজিস্ট্রি করে দেওয়া হবে। কিন্তু তা আর হয়নি।”

তিনি জানান, সিলেটের মেজরটিলা এলাকায় ৪ ডেসিমেল জায়গা বিক্রির প্রতিশ্রুতি দিলেও পরে জানা যায়, সেই জমির মালিকানা ও দখল নিয়ে মামলা চলছে। বিষয়টি জানার পর স্থানীয় পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি মইনুল হক চৌধুরী, সহ-সভাপতি আবু সুফিয়ান, সাধারণ সম্পাদক মো. কামরম্নজ্জুজামান দিপু, সদস্য ফারুক আহমদ চৌধুরীকে বিষয়টি অবগত করি। পরে পঞ্চায়েতের মাধ্যমে সালিশে বসা হলে কামাল আহমদ টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করেন এবং বিকল্প হিসেবে নিজের বাসার নরসিংটিলার অংশ থেকে তিন শতক জায়গা রেজিস্ট্রি করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু সেটিও পরবর্তীতে অস্বীকার করেন।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, “১২ মে ২০২৫ তারিখে যখন জমি রেজিস্ট্রির বিষয়টি আবার জানতে চাই, তখন কামাল আহমদ, তার স্ত্রী রুহেনা বেগম এবং শ্যালক আওলাদ হোসেন আমাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং আমাকে ও আমার ভাসুর মাহবুব হোসেন জীবনকে খুন করে লাশ গুম করার হুমকি দেন।”

হাসনা বেগম অভিযোগ করেন, থানায় অভিযোগ দিলেও তা আমলে নেওয়া হয়নি। পরবর্তীতে তিনি আদালতের শরণাপন্ন হয়ে দুটি মামলা দায়ের করেন একটি ফৌজদারি কার্যবিধির ১০৭/১১৭ ধারায়। যার মামালা নং ১১৫/২৫ইং এবং আরেকটি প্রতারণার অভিযোগে ৪০৬/৪২০/৫০৬/৩৪ ধারায়। যার মামালা নং ৫৯৭/২৫ইং।

সংবাদ সম্মেলনে হাসনা বেগম বলেন, “এ ঘটনার সাক্ষ্য-প্রমাণ, ভিডিও ফুটেজ সব আমার কাছে রয়েছে। আমি আপনাদের লেখনীর মাধ্যমে ন্যায়বিচার পেতে চাই। স্থানীয় প্রশাসনের কাছে অনুরোধ, দোষীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনা হোক এবং আমার পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হোক।”

স্থানীয় পঞ্চায়েত সূত্রে জানা গেছে, বিষয়টি তাদের সামনে স্বীকার করলেও কামাল আহমদ এখনও প্রতিশ্রুতি পালন করেননি। এ নিয়ে এলাকাজুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।