বিএনপি নেতা ফজলুরের আলেমবিদ্বেষী বক্তব্য, নিন্দার ঝড়

কওমি কণ্ঠ রিপোর্টার : 

দেশের আলেম-ওলামা ও তৌহিদি জনতা সম্পর্কে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ফজলুর রহমানের অবমাননাকর বক্তব্যে নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। বৃহস্পতিবার (১৫ মে) তার বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব মাওলানা জুনাইদ আল হাবিব।

আর শুক্রবার (১৬ মে) একই বিষয়ে বিবৃতির মাধ্যমে প্রতিবাদ জানিয়েছে সম্মিলিত কওমি ফোরাম। 

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে বলেন- বিএনপি চেয়ারপারসনের কথিত উপদেষ্টা ফজলুর রহমান একটি ন্যাশনাল টিভিচ্যানেলে দেশের ওলামায়ে কেরাম ও লাখ লাখ তৌহিদি জনতা সম্পর্কে অত্যন্ত অবমাননাকর, মূর্খতাপ্রসূত ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন। এমনকি আলেম-ওলামাকে গর্ভে ধারণ করা হাজার হাজার গর্বিত মায়ের প্রতিও তিনি ধৃষ্টতাপূর্ণ কথা বলতে ছাড়েননি। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।

তারেক রহমানের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমরা বিস্মিত—এ ধরনের বাচাল লোক কীভাবে আপনার দলের একজন উপদেষ্টা হতে পারে! ২০১৩ সালে হেফাজতে ইসলামের নেতৃত্বে সংগঠিত সমগ্র ওলামায়ে কেরাম ও তৌহিদি জনতার আন্দোলনকে অকুণ্ঠচিত্তে সমর্থন দিয়েছিলেন আপনার ধর্মপ্রাণ দেশপ্রেমিক মা বেগম খালেদা জিয়া। সে কারণে তিনি আজও আমাদের কাছে শ্রদ্ধার পাত্র। কিন্তু ওই বছরের ৫ মে শাপলা চত্বরে হেফাজতের গণঅবস্থানকালে ফজলুর রহমানের মতো আলেমবিদ্বেষী কিছু নেতাই আপনার দলকে বিভ্রান্ত করেছিল বলে আমরা মনে করি।

তিনি তারেক রহমানের উদ্দেশ্যে আরও বলেন, শাহবাগের ইন্ডিয়ান ছোবল থেকে সেদিন বিএনপিও রক্ষা পায়নি। ভুলে যাবেন না, তৌহিদি জনতাকে সঙ্গে নিয়ে শাহবাগের সেই দেশবিরোধী দানবের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলে শতাধিক প্রাণ ও রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশকে ইন্ডিয়ার সামরিক উপনিবেশ হওয়া থেকে রক্ষা করেছিল হেফাজতে ইসলাম। অথচ সেই আলেমসমাজ ও তৌহিদি জনতা সম্পর্কে আপনার দলের কথিত উপদেষ্টা অবমাননাকর বক্তব্য দিয়েছেন। আমরা এতে গভীরভাবে দুঃখ পেয়েছি। দলীয়ভাবে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিবেন বলে আমরা আশা করি। না হয় এমন কিছু নেতা আপনার দলের জনপ্রিয়তা নষ্ট করতে থাকবে।

জুনাইদ আল হাবিব বলেন, চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানেও আলেম-ওলামা ও মাদরাসা ছাত্রদের অপরিসীম আত্মত্যাগ উল্লেখযোগ্য। আজকের বাংলাদেশে আলেম-ওলামাকে অবজ্ঞা করে পথ চলার সুযোগ নেই। আলেম-ওলামা ও তৌহিদি জনতাকে শত্রু বানালে ফ্যাসিস্টদের মতো পরিণতি বরণ করতে হবে। এছাড়া সমাজে আলেম-ওলামা ও মাদ্রাসাছাত্র সম্পর্কে পুরোনো দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে।

অপরদিকে, শুক্রবার সম্মিলিত কওমি ফোরাম-এর মিডিয়া সচিব মাওলানা মাহমুদুল হাসান এক বিবৃতিতে বলেন- উলামায়ে কেরাম ও তাওহিদি জনতা নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ফজলুর রহমানের বক্তব্যকে চরম অবমাননাকর ও মূর্খতাপ্রসূত অভিহিত করে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে। 

ফোরামের আহ্বায়ক মাওলানা আহমদ কবীর খলীল এবং সদস্যসচিব মাওলানা মিনহাজুর রহমান ওলি এই বিবৃতির মাধ্যমে বলেন- একটি টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে দেয়া ফজলুর রহমানের অবমাননাকর বক্তব্যের বিরুদ্ধে আমরা গভীর ক্ষোভ, তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সে কেবল আলেম-উলামার বিরুদ্ধে বিদ্বেষী মন্তব্য করেই থেমে থাকেনি, বরং আলেম সমাজকে গর্ভে ধারণকারী সমাজের সবচেয়ে শ্রদ্ধাক্ত মায়েদের প্রতিও অসম্মান দেখিয়েছে। প্রকাশ্যে এ ধরনের কটূক্তিপূর্ণ মন্তব্য শুধু অশালীন ও রাজনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূত নয়, বরং এটি গোটা ধর্মপ্রাণ জাতির আত্মমর্যাদার ওপর আঘাত। এ আঘাত কখনও বরদাশত যোগ্য নয়।

তারা বলেন- কথিত বিএনপি নেতা ফজলুর রহমান যদি দ্রুত সময়ের মধ্যে জাতির কাছে ক্ষমা না চায় তাহলে এর খেসারত বিএনপিকেও দিতে হবে। সুতরাং সম্মিলিত কওমি ফোরাম বিএনপির প্রতি আহবান জানাচ্ছে যে- আপনারা এই ফজলুর রহমানকে দলীয়ভাবে দ্রুত বিচারের আওতায় নিয়ে আসেন।

তারা আরও বলেন- ফজলুর রহমান যদি দ্রুত ক্ষমা চেয়ে সংশোধিত না হয় তাহলে এদেশের তাওহিদি জনতাকে সাথে নিয়ে সম্মিলিত কওমি ফোরাম কঠিন কর্মসূচীর দিকে অগ্রসর হবে ইনশাআল্লাহ।